দামুড়হুদায় সম্পুর্ন অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা

দামুড়হুদায় সম্পুর্ন অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা
চুয়াডাঙ্গা  প্রতিনিধিঃ
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় সরকারী নিয়ম-নিতির উপেক্ষা করে যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এসব ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও ফসলি জমির মাটি। যেমন পরিবেশ দুষন হচ্ছে তেমনি বাড়ছে রোগবালাই। এতে করে উজার হচ্ছে বাগান তেমনি উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি একই ভাবে নষ্ট হচ্ছে সড়ক। এগুলো বসুতি এলাকা এক কিলোমিটার দুরে গড়ে তোলার নিয়ম থাকলে ও এসব ভাটার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে তিন কিলোমিটারের ভিতরে তেমনি তিন ফসলি জমিতে।বেশির ভাগই নেই লাইসেন্স,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।
তথ্য সূত্রে  জানাগেছে,উপজেলায় ৪০টি ইটভাটা রয়েছে এরমধ্যে ৩০টি নিবদ্ধিত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেই। এগুলো অবৈধ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে।হাতে গোনা কয়েকটির বৈধ কাগজপত্র থাকলেও অধিকাংশ ভাটাই জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ।তবে এর অধিকাংশই ফসলি জমির পাশে। এসব ভাটার পাশের জমিতে রয়েছে আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল। ভাটার থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় ধানক্ষেত বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংখা করছেন কৃষকরা। এতে ভাটার আশপাশের গ্রমীন জনপদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
সরেজমিনে উপজেলার  চুয়াডাঙ্গা – যশোর প্রধান  সড়কের সাথে গড়ে উঠেছে শেখ ব্রিকস, জয়ারামপুর কাঁঠালতলা নামক তারানিপুর গ্রামীণ সড়কের দু’পাশে দেশ ব্রিকসের আরো দুটি ভাটা রয়েছেন,দামুড়হুদা – মুজিবনগর সড়কের সাথে  গড়ে উঠেছে দেশ ব্রিকস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়িয়ে রয়েছেন সোনালী ব্রিকস, একই সড়কের  নাপিতখালি – বদনপুর  মোড় নামক স্থানে মসজিদ ও কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে তুলা হয়েছেন রেড ব্রিকস ও বোস ব্রিকস, কিছু পথ এগিয়ে মোক্তারপুর নামক স্থানে গড়ে উঠেছে রেড ব্রিকস -২, কার্পাসডাঙ্গা- মুজিবনগর সড়কের কানাঈডাঙ্গা মোড়ের আগের ২ টি ভাটা সহ উপজেলার বেশির ভাগ ইটের ভাটাগুলোতেই পুড়ছে কাঠ, ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছেন ফসলি জমির মাটি।তবে  দুঃখ জনক আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এ সকল ইটের ভাটা গুলো বছরের পর বছর একই ভাবে অবৈধ উপায় অবলম্বনে চালিয়ে  আসলেও অদৃশ্য শক্তিতে বছরের পর  ভাটা গুলোর কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে দাবি সচেতন মহল, পথচারী সহ শিক্ষার্থীদের।
পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এদিকে ভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করায় শতশত হেক্টর কৃমি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে।
কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক হারে ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে জ্বালানি হিসাবে কাঠ। কাঠ ব্যবহারের ফলে উজাড় হচ্ছে এলাকার গাছপালা।ট্রক্টরে করে মাটি ও কাঠ বহনের ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়কগুলো।বেপরোয়া ভাবে চলাচলকারী ট্রাক্টর থেকে ঝরেপড়া মাটি বালিতে সড়কগুলোর বেহাল দশা হচ্ছে।স্কুল কলেজে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে যেমন চরমভাবে বিঘœসৃষ্টি হচ্ছে তেমনি দুর্ঘটনার ও আশংখা করছে অভিভাবকরা। এবিষয়ে স্কুল চলাকালিন সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সড়কের  ট্য্রাক্টর চলাচল বন্ধ রাখতে থানার সরনাপন্ন হতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক বলেন, ভাটাগুলো যখন গড়ে তোলা হয় তখন এর আশেপাস কোন বসুতি এলাকা ছিলোনা। জনসংখা বৃদ্ধির কারনে বসতবাড়ী গড়ে উঠায় বসুতি এলাকা হয়ে গেছে। তার কয়লা ও কাঠের দুটি ভাটা রয়েছে। কাঠ পোড়ানোর বিষয় তিনি বলেন,কয়লার দাম ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হলে ত্রিশ হাজার টাকার উপরে ইট বিক্রি করতে হবে। বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন দীর্ঘদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবার সোনালী ব্যংকের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া হলে ও তারা পরিবেশের ছাড়পত্র দিচ্ছে না।
উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন,তাদের গ্রামের ভৈরব নদীর সন্নিকটে রয়েছে,প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ট্রাক্টরে করে ভৈরর খনন করা মাটি বহন করে ইটভাটা সহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছিল। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারনে ধুলা বালি উড়ার কারনে ও দুর্ঘটনার আশংখা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত কারী শিক্ষার্থী সহ পথচারিদের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছিল। এমন অবস্থায় দামুড়হুদা মডেল থানার সহায়তায় স্কুল চলাকালীন সময় মাটি বহন বন্ধ করা হয়েছে।
 উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, ইটভাটা প্রায় সবই তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে। এতে করে নির্গত কালো ধোঁয়ায় ধানক্ষেত বিভিন্ন ফসল ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ও নতুন ভাটাবৃদ্ধি না পেলেও প্রতিবছর ভাটা সম্প্রসারিত হওয়ায় ফসলি জমি কুমে যাচ্ছে। ফসলি জমি থেকে মাটির উপরের অংশ কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে।এসব ভাটা পরিবেশের পাশাপাশি কৃষি জমির ক্ষতি করছে।
পরিবেশে অধিদপ্তর কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলাতে মোট  ইট ভাটার সংখ্যা রয়েছে ১০২ টি, যার মধ্যে বৈধের সংখ্যা ২৬ টি  অবৈধের সংখ্যা ৭৬ টি।নেই  পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র।কার্যালয়টির দাবি প্রায় প্রতি বছরের ভাটা সিজনের এ সময়ে জরিমানা সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও  থেমে নেই ভাটা মালিকরা।
এ বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তর,  কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ- পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানিয়েছেন, ইট ভাটা প্রস্তুত ও নিয়ন্ত্রণ আইন উপেক্ষা করে যে সকল ইট ভাটা গুলো তৈরি করা হয়েছে, সে সকল ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 উল্লেখ্য,১৩ নভেম্বরের পর থেকে ৭ দিনের মধ্যে সারা দেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা  জেলার অবৈধ ভাবে নির্মিত  হওয়া ইট ভাটার কার্যক্রম ও জ্বালানি হিসেবে  ইটভাটার কাঠের  ব্যবহারে বন্ধের নির্দেশনা দিলেও ৭ দিন পেরিয়ে মাসের কাছাকাছি আসলেও    চুয়াডাঙ্গা জেলাতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবতানের জন্য সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি এখনো পর্যন্ত।ফলে  এ উপজেলার অবৈধ ভাটা গুলোতে প্রকাশ্যেই চলছে অবৈধ উপায় অবলম্বন কটে ইট পোড়ানোর মহোৎসব।

আপনি আরও পড়তে পারেন